বিয়ে

by | Oct 29, 2019 | Non Fiction

চারপাশে অনেক সমস্যা। থাকি ঢাকায় -সমস্যার শহর। অবাসযোগ্য শহর হিসেবে আমরা এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় (Global Liveability Index 2019)। এইটাও সমস্যা। গত বছর আমরা দ্বিতীয় ছিলাম। এইবার এক ধাপ পিছিয়ে গেলাম। আমাদের অবস্থা এখন ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত -অপুষ্ট ও অবহেলিত। স্পটলাইট থেকে দূরে সরে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। তবে কবি কিন্তু কথা সত্যি বলেছেন, “সব সমস্যারই সমাধান আছে, যদিও বা সমাধানটি অনাকাঙ্ক্ষিত হয়” (Alice Hoffman)।
যেমন ধরা যাক আমার সমস্যা সমষ্টি (মানসিক ও শারীরিক), যা কিনা আমার পারিপার্শ্বিক সমস্যাসমূহের প্রভাবে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত। এই সমস্ত সমস্যাগুলো বিভিন্ন অবতারে আবির্ভূত হয়। কখনোও মনুষ্য রূপে। কখনও কর্ম হয়ে। কখনও বা লুকিয়ে থাকে দৃষ্টির অগোচরে, আড়াল থেকে শুধু প্রভাব বিস্তার করে যায়। আমার মানসিক র্যাডার সেটা সনাক্ত করতে ভুলে না কখনোও।
কবি নাকি আরও বলেছেন, “দেহ আমাদের মনের দাসমাত্র” (James Allen)। তাই সেই মনের প্রভাব গিয়ে পরে দেহে। অবাসযোগ্য প্রকৃতিতে বসবাসের ফলশ্রুতিতে, গড় আয়ুতেও মোটামোটি ভালই ছাড় পেয়েছি। বলতে গেলে, মধ্যবয়সে এই পা ফেললাম বলে। নাকি আরও তিন-চার বছর আগেই পা দিয়ে ফেলেছি? আমাদের দেশের আবহাওয়া দপ্তরের মত সেটা সঠিকভাবে পূর্বাভাস কেন? আভাস চলাকালীন সময়েও বলা সম্ভবপর নয়। কিন্তু ডাক্তার কড়া গলায় বলে দিলেন, আমার হৃদয় নাকি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অবস্থান করছে। ঝুঁকির দেশে থাকি, তাই অবাক হলাম না। সমস্যার সমাধান চাইলাম। প্রেসক্রিপশনে উনি অবোধ্য অক্ষর সমষ্টি দিয়ে অর্ধ বাক্য গঠন করে লিখেও দিলেন হৃদরোগ প্রতিরোধক কিছু ঔষধসমূহ।
ঔষধ সম্বন্ধে সুশিক্ষা পাওয়ার পর থেকে আমি প্রচন্ড মাথা ব্যাথার জন্যেও ঔষধ খেতে গেলে দ্বিতীয় বারের পরে তৃতীয়বার ভাবি। আর এখন? আমার একটা ঔষধ সংরক্ষন করার বাক্স আছে। সেখানে হরেক রং ও ঢং -এর ঔষধ থাকে। তবে সেটা সমস্যা না।
সমস্যা হচ্ছে, এই প্রত্যেকটি ঔষধের আছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। নিউটনের তৃতীয় সূত্র খানিকটা মেনে ঔষধগুলো তাদের ক্রিয়া সম্পন্ন করে। তারই জের ধরে, একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। মহা বিপদ। এইবার গেলাম ত্বকের ডাক্তারের কাছে। উনিও আগের জনের মত রক্তের কিছু পরীক্ষা দিলেন। আমি এমনিতেই শান্তি প্রিয় মানুষ, রক্তারক্তি ভাল লাগে না বলে কোরবানি পর্যন্ত দেই না। পরীক্ষাগারের কর্মী যখন আমার বাম হাতের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন, আমি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, “গতকাল এই হাতে ফুটা করেছেন, এইটাকে আজকের মত রেহাই দেয়া যায় কি?” উত্তরে উনি হাসলেন। তারপরে লম্বা ও মোটা একটা সুচ ঢুকিয়ে দিলেন ডান হাতে। আমি নিজেকে এই পাশবিক দৃশ্য দেখা থেকে বিরত রাখতে, মননিবেশ করলাম দূরে টাঙ্গিয়ে রাখা পাতলা পর্দার একটি দূরদর্শনে। সেখানে “ব্রেকিং নিউজ” সম্বলিত দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেক তথ্য কনিকা পর্দার ডান পাশ থেকে বাম পাশে যেতে যেতে দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছিল। পড়তে বেশ সমস্যাই বোধ করছিলাম। কিন্তু এই ফাঁকে রক্ত নেওয়া শেষ। যাক, একটা সমস্যার ঘোর কাটল।
রাতে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কক্ষে হাজির হলাম। উনি আমার রিপোর্ট দেখলেন। আগের চিকিৎসা-ইতিহাস জানলেন। উনিও কিছু ঔষধ দিলেন। এর মধ্যে আছে একটা ঠোঁটে লাগানোর ক্রিম আর একটা গায়ে মাখার লোশন। যেহেতু কবি আরও বলেছেন, “ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে” (এই কবির নাম জানি না), উনি উনার প্রেসক্রিপশনের শেষ ঔষধের নাম লিখতে লিখতে বললেন, “এইটা করতে পারলে আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর কোন ঔষধ খাওয়া লাগবে না। কিন্তু যতদিন না এই ঔষধ পাচ্ছেন, ততদিন সব ঔষধ চালিয়ে যান।“
সমস্যার সমাধান পেলাম ঠিক! তবে সেখানেই যে আরেকটি বৃহদাকার সমস্যার সূচনা! দিল্লির সেই প্রখ্যাত বা কুখ্যাত মিষ্টান্নের নিকটবর্তী যেই স্বাদ আমি এই এক জীবনে পেয়েছি, এর পরে আমি এই ডাক্তার মশাইকে কি করে বোঝাই যে, উনার দেওয়া সমাধানই হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা (যেটা কিনা আমি সারা জীবন এড়িয়ে যাওয়ার এক মহা সংকল্পে নিজেকে আবদ্ধ করেছি)!

Written By A F M Munif Mushfiq Khan

undefined

Related Posts

স্বৈরাচার পতনের পর নাগরিকদের করণীয়

স্বৈরাচার পতনের পর নাগরিকদের করণীয়

একজন স্বৈরাচারের পতন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা নিয়ে আসে। তবে, এই মুক্তির মুহূর্তটি দ্রুত বিশৃঙ্খলায় পরিণত হতে পারে যদি নাগরিকরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ না করে। আইন ও শৃঙ্খলার অনুপস্থিতিতে, বেআইনি কার্যকলাপ সমাজের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।...

read more
আব্বা

আব্বা

হাতে এতগুলো কাজ, কিন্তু কিছুতেই মন বসছে না। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার যে ইচ্ছাটি আমার মাঝে মাঝে করে, সেটি আজকে একটু প্রবল। ব্যস্ততার কারনে, নতুন ভাড়া বাসায় এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও, বাসার সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারি নি এখনো। এই শীতের ছুটিতে, অনেকটুকু কাজ...

read more
দাদু

দাদু

নান্দাইল আমার নানীর বাড়ি আর মুক্তাগাছা আমার দাদীর বাড়ি। নানীর বাড়িতে আমার জন্যে ছিল অবারিত স্বাধীনতা আর দাদীর বাড়িতে ছিল অফুরন্ত ভালবাসা। আমার দাদা ও দাদী দুইজনই খুশিতে ব্যস্ত হয়ে যেতেন আমাদের পেলে। দাদা আনতেন বাজার করে আর দাদী ব্যস্ত হতেন রান্নায়। আমার দাদীকে আমি...

read more

0 Comments